তুষার তুহিন. কক্সবাজার :: জেলায় প্রায় ২৫ মাস ধরে বন্ধ থাকা জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম চালু হচ্ছে শিগগিরই। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ নাগরিক সেবাটি বন্ধ থাকায় জনগণের সীমাহীন ভোগান্তির বিষয়ে চকরিয়া নিউজ সহ স্থানীয় গণমাধ্যম গুলোতে খবর প্রকাশের প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের রুল ও পরবর্তীতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় জন্মনিবন্ধন সার্ভার খুলে দেওয়া হচ্ছে। তবে এবার জন্মনিবন্ধন সনদ মিলবে অধিকতর যাচাই-বাছাইয়ের পর।
জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসনে জানিয়েছেন, পূর্বের মতো পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অথবা সচিব সরাসরি জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে তারা শুধু সুপারিশ করতে পারবেন। এরপর আবেদনকারীর আবেদন যাচাই-বাছাই করবে উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টাস্কফোর্স বা যৌথ কমিটি।
বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কারণে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলার অনলাইন জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যু সনদ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি যুক্ত করে গত ২৯ অক্টোবর জেলায় পুনরায় জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু সনদ চালু করতে উচ্চ আদালতে রিট করেন কক্সবাজার শহরের রুমালিয়ারছড়া বাসিন্দা ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা। রিটের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করার পর গত ১৩ জানুয়ারি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে কক্সবাজারের জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যু সনদের অনলাইন কার্যক্রম পুনরায় চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সেই সিদ্ধান্ত মতেই এ মাসের শেষ সপ্তাহেই চালু হতে পারে সেবাটি।
সূত্র জানায়, রোহিঙ্গাদের কারণে জন্মনিবন্ধন বন্ধ থাকায় ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে চাকরির আবেদন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ যাবতীয় কাজে জন্মনিবন্ধন সনদ দরকার হওয়ায় কক্সবাজারসহ কয়েকটি জেলার মানুষের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এ বিষয়ে রিটকারী ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা বলেন, আমি কক্সবাজারের মেয়ে। তাই জেলাবাসীর স্বার্থ চিন্তা করে গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে পত্রিকায় প্রকাশিত ‘২০ মাস ধরে বন্ধ জন্ম নিবন্ধন’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি যুক্ত করে জন্ম নিবন্ধন চালু করতে একটি রিট করি। যার রিট নম্বর ১১৩৫১/২০১৯। এতে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া পুনরায় চালুর নির্দেশনা চাওয়া হয়।
আইনজীবী নাসরিন সিদ্দিকা লিনা বলেন, রিটের প্রেক্ষিতে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়া পুনরায় শুরু করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করে হাইকোর্ট। কার্যক্রমটি পুনরায় চালু করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয় রুলে।
স্থানীয় সরকার সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, নির্বাচন কমিশন, রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু), চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে চার সপ্তাহের মধ্যে ওই রুলের জবাব দিতে বলা হয়। ইতোমধ্যে অনেক সংস্থাই রুলের জবাব দিয়েছে। অনেক সংস্থার জবাব এখনো মিলেনি। তবে এরই মধ্যে জন্ম নিবন্ধন সার্ভার খুলে দেওয়া জেলাবাসীর জন্য একটি সুখবর। আশা করছি জন্মনিবন্ধন কার্যক্রমের সাথে জড়িতরা সঠিকভাবে ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করবেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী শিগগিরই জন্মনিবন্ধন সার্ভার ফের চালু হচ্ছে। তবে কক্সবাজারে যেহেতু বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা অবস্থান করছে সেজন্য জন্মনিবন্ধন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা কড়াকড়ি ব্যবস্থা অবশ্যই থাকবে।
তিনি আরো বলেন, পূর্বের মতো পৌর মেয়র, ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অথবা সচিব সরাসরি জন্মনিবন্ধন সনদ দিতে পারবেন না। এক্ষেত্রে তারা শুধু সুপারিশ করতে পারবেন। এরপর আবেদনকারীর আবেদন যাচাই-বাছাই করবে উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি টাস্কফোর্স বা যৌথ কমিটি থাকবে। আবেদনকারীর জন্মস্থান এবং জাতীয়তা যাচাই করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও ) সনদ প্রদানের অনুমোদন দিবে। এরপর আবেদনকারীরা আগের মতো পৌরসভা কিংবা ইউপি কার্যালয় হতে সনদ সংগ্রহ করবেন।
এদিকে নতুন এই নিয়ম সম্পর্কে জানাতে ও সনদের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে ২০ জানুয়ারি কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে একটি সচেতনতা সভার আয়োজন করেছে জেলা প্রশাসন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারের উপ-পরিচালক (ডিডিএলজি) শ্রাবন্তি রায় চকরিয়া নিউজকে বলেন, ইউএনওকে প্রধান করে উপজেলা পর্যায়ে একটি কমিটি আগে থেকেই রয়েছে। সেসময় তাদের কার্যক্রমের পরিধি কম থাকলেও এখন বাড়ছে। জন্ম নিবন্ধন ও মৃত্যু সনদ কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত করতে জেলার ৪ পৌরসভার ও ৭১ ইউনিয়নের সকল জনপ্রতিনিধি, সচিব, তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তোদের সাথে একটি সভা করা হবে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকার সহায়তা প্রকল্প-৩ এর অধীনে আগামী ২০ জানুয়ারি কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ম্যানেজমেন্ট ইনফেরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) সভায় আরো অনেকগুলো বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও মূল আলোচ্য বিষয় থাকবে জন্মনিবন্ধন ও মৃত্যু সনদ প্রদান বিষয়ে সকলকে সচেতন করা।
এদিকে জন্মনিবন্ধন খুলে দেওয়ার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বিশিষ্ট আইনজীবী এড. আয়াছুর রহমান চকরিয়া নিউজকে বলেন, দীর্ঘ ভোগান্তির পর অবশেষে কক্সবাজার জেলার অনলাইন জন্মনিবন্ধন সার্ভার খুলে দেওয়া জেলাবাসীর জন্য সুখের খবর। জেলাবাসী তাদের অধিকার ফিরে পাচ্ছে।
পাঠকের মতামত: